- ///
- বালাগঞ্জ




বালাগঞ্জ, সিলেট
বালাগঞ্জ উপজেলা, সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত, কুশিয়ারা এবং কালনী নদীর তীরে অবস্থিত। বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। বালাগঞ্জ পূর্বে কুশিয়ারা নদী নামে "কুশিয়ারকূল" হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এটি মদন মোহন জিউ আশ্রমের প্রভাবে ''মদনগঞ্জ" নাম পরিচিতি পেয়েছিলো। এই আশ্রমের সেবায়েতগণ হাতে বালা পরতেন এবং এই এলাকায় বিপুল পরিমাণে বালা’কেনা-বেচা হত। পরবর্তীতে থানা গঠনের সময় বালাগঞ্জ নামকরণ করা হয়।
বালাগঞ্জ থানা ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে এটিকে উপজেলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। উপজেলাটির আয়তন প্রায় ১৫১.২১ বর্গকিলোমিটার, এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম উপজেলা। এখানে ১৪টি ইউনিয়ন, ২৩৭টি মৌজা এবং ৪৭২টি গ্রাম রয়েছে। এটি উত্তরে দক্ষিণ সুরমা এবং সিলেট সদর উপজেলা, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা, পূর্বে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে বিশ্বনাথ ও নবীগঞ্জ উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে, ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ রোড, খাদিমপুর-সৈয়দপুর রোড, এবং নয়াখাদিমপুর-মান্দারুকা রোড, এই উপজেলার প্রধান সড়ক। সিলেট সদর থেকে বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার। এই উপজেলায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। রাস্তাটি নাজির বাজার হয়ে উপজেলা এলাকায় প্রবেশ করে এবং কুড়ুয়া, দয়ামির, ওসমানীনগর হয়ে যায়। সেখান থেকে ওসমানীনগর -বালাগঞ্জ সড়ক ধরে উপজেলা সদর এলাকায় পৌঁছানো যায়। বাস ছাড়াও, আপনি উপজেলার ভেতরে এবং বাইরে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন ধরণের পরিবহন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, উপজেলা থেকে রেলওয়ে স্টেশন এবং এয়ারপোর্ট বেশ দূরে।
কৃষি এই উপজেলার প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। এছাড়াও মৎস উৎপাদন, পশু পালন, এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। এখানকার প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, আলু। এখানকার স্থানীয় কুটিরশিল্প যেমন, শীতলপাটি, নকশি পাটি, সারা দেশে জনপ্রিয়। এখানকার অনেক মানুষ বিদেশে কর্মরত আছেন, তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
এই উপজেলায় ৫৯৬টি মসজিদ, ৫৪টি মন্দির এবং ১৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ববর্গ হলেন, শায়খুল হাদিস আল্লামা নূর উদ্দিন গহরপুরী (খ্যাতিমান আলেম এবং হাদিস বিশারদ), রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় (শিক্ষাবিদ, এম সি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা), এবং আতাউল গণি ওসমানী (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক)।
এই উপজেলার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হল ওসমানী জাদুঘর, যেটি দয়ামির গ্রামে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস। উপজেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে গোপাল জিউর আশ্রম, এসওএস শিশু পল্লী, কাদিপুর দীঘিরপাড় জামে মসজিদ, আদিত্যপুর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আখড়া, নগেন্দ্রদাশ চৌধুরীর বাড়ির ভগ্নাবশেষ, চন্দ্রনাথ শর্মার মন্দির, গিরিশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি, কুশিয়ারা নদী, ইত্যাদি। এখানে বিভিন্ন হাওর এবং বিল রয়েছে, যেমন পাতাচতল বিল, চেপ্তি বিল, মাজাইল বিল এবং মেরোয়ার হাওর।
শান্ত-মনোরম পরিবেশ হওয়ায় এই অঞ্চলটি বসবাস করার জন্য আকর্ষণীয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই উন্নয়নের ফলে, এখানে প্রচুর বাসস্থানের চাহিদা তৈরী হয়েছে। অনেক আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তবে এই অঞ্চলের অনেকাংশ নিম্নভূমি হওয়ায়, বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। উপজেলার ভিতরের বিভিন্ন রাস্তা এবং কৃষি জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সিটি ইনসাইট
পরিচিত ল্যান্ডমার্ক সমূহ
Kushiyara River
Patachatal Beel
Osmani Museum
Balaganj Police Station
Jamia Islamia Husainia Gohorpur