- //
- ময়মনসিংহ




ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ লোক ঐতিহ্যেময় এবং প্রাণবন্ত ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, শিক্ষাগত উৎকর্ষতা, এবং কৃষি কার্যক্রমের জন্য জেলাটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক দিক থেকেও জেলাটি তাৎপর্যময়। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। জেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভালুকার ভাওয়াল বন, লোক-ঐতিহ্য এবং মুক্তাগাছার মন্ডার জন্য বিখ্যাত।
কৃষি এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। এখানে প্রচুর উর্বর জমি এবং মাছের ঘের রয়েছে। এই অঞ্চলের ধান, পাট, আখ, গম, তৈলবীজ, ডাল, হলুদ, আদা, মরিচ, ফলমূল এবং মাছ চাষ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এখানকার রেমিটেন্স এবং স্থানীয় ব্যবসাও, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। জেলাটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ভোগাই, বাজুয়া, কাঁচামাটিয়া, কংস নদী, এবং বিভিন্ন জলাভূমি দিয়ে ঘেরা। যা এখানকার কৃষি এবং মৎস উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব দিকে নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পশ্চিম দিকে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা। উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও গারো পাহাড়, এবং দক্ষিণে গাজীপুর জেলা অবস্থিত। এই জেলার সড়ক এবং রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, ময়মনসিংহ-গফরগাঁও রোড, ময়মনসিংহ-ভৈরব রোড, ত্রিশাল-বালিপাড়া রোড, ভালুকা-গফরগাঁও রোড, এই জেলাকে সারা দেশের সাথে সংযুক্ত করেছে।
ময়মনসিংহ সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলের লোকসঙ্গীত, বাউল গান, পালাগান, গারো সম্প্রদায়ের প্রবাদ, হাজং সম্প্রদায়ের শ্লোক এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসব, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট বজায় রেখেছে। এই অঞ্চলের ''মৈমনসিংহ গীতিকা'' রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রাচীন লোকগান এবং অজস্র শ্লোকের সংগ্রহ। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকা ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার শিক্ষার মান বেশ উন্নত। এখানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল সহ প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পলিটেকনিক, নার্সিং এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এই জেলায় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জন্মগ্রহণ করেছে। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, চিত্র শিল্পী জয়নুল আবেদীন, কিংবদন্তি লোকশিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, লোকসঙ্গীতের আইকন আব্দুল আলীম, এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, এখানকার উল্লেখযোগ্য মহান ব্যক্তিত্ব। শশী লজ, গৌরীপুর লজ, আলেকজান্ডার দুর্গ, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, ইত্যাদি এই অঞ্চলের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানকার ময়মনসিংহ জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, আলাদীন'স পার্ক, গারো পাহাড়, ইত্যাদি স্থাপনায় প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
ময়মনসিংহের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। এখানকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক ও রেল যোগাযোগ এবং অন্যান্য পরিষেবার মান উন্নত হচ্ছে। এই জেলায় অনেক মসজিদ, মন্দির এবং গির্জা রয়েছে। সকল ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে বসবাস করেন। এই অঞ্চলে গারো, হাজং, এবং কোচ জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসীরাও নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে বসবাস করছেন।
ঐতিহাসিকভাবে ময়মনসিংহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মোটামুটি ভালো ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য এই জেলা আবাসস্থল এবং ব্যবসার জন্য বেশ ভালো একটি জায়গা। এই অঞ্চলের প্রপার্টির চাহিদা এবং দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করার জন্য ময়মনসিংহ ভালো একটি অপশন হতে পারে।
সিটি ইনসাইট
পরিচিত ল্যান্ডমার্ক সমূহ
Bangladesh Agricultural University Mymensingh
Mymensingh Museum
Shashi Lodge
Mymensingh Botanical Garden
Garo Hill