জৈন্তাপুর, সিলেট জেলার একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা এবং একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলাটি সবুজ পাহাড়, চা বাগান, নদী আর টিলায় ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্য্যে গঠিত। এই উপজেলার তামাবিল এলাকাটি সিলেট এবং ভারতের শিলংয়ের মধ্যকার সীমান্ত চৌকি। জাফলং, শাপলা বিল, মেঘালয় রাজ্য সহ বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে যেতে হলে জৈন্তাপুর উপজেলা হয়ে পৌঁছাতে হবে। এই উপজেলায় প্রচুর রিসোর্ট এবং বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। উপজেলাটির একপাশ দিয়ে সারি-গোয়াইন নদী বয়ে গেছে। এছাড়াও পাহাড়, বিল এবং জলাশয় এখানকার পরিবেশকে প্রাণবন্ত করেছে।<br><br>
জৈন্তাপুর উপজেলা, সিলেট শহর থেকে ৪৩ কিমি উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা, পূর্বে কানাইঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা। উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন, ১৪২টি মৌজা ও ১৭৪টি গ্রাম রয়েছে। এটির টোটাল আয়তন প্রায় ২৫৬.৬৯ বর্গ কিলোমিটার। সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে এই উপজেলার প্রধান মহাসড়ক।<br><br>
এই উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। চা, পান, ধান এবং তেজপাতা এখানকার প্রধান ফসল। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, নুড়ি, চা, তেজপাতা, পান, এবং বাদাম বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এছাড়াও এই উপজেলার শিল্প খাত, স্থানীয় ব্যবসা, জনবল, এবং পণ্য পরিবহনও দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।<br><br>
এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, তবে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ একসাথে বসবাস করে। খাসিয়া, মণিপুরী সহ বেশ কিছু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এই উপজেলায় বসবাস করেন। তাদের স্বতন্ত্র ভাষা, পোশাক এবং রীতিনীতি সহ বৈচিত্রময় সাংস্কৃতি পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। এখানে বিজিবি ক্যাম্প এবং পুলিশ স্টেশন রয়েছে, যা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করেছে।<br><br>
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখার কাছাকাছি, এই উপজেলাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। আবাসস্থল হিসেবে এই উপজেলা খুবই স্বাস্থকর। পর্যটন স্পট হওয়ায় এখানে প্রচুর হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, এবং আবাসিক ভবন গড়ে উঠছে। এলাকাটির জমির দাম তুলনামূলক কম হলেও, এখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এখানকার গ্রাম এলাকায় বাড়ি ভাড়া বেশ সাশ্রয়ী।<br><br>
এই উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ক্লিনিক এবং ডাকঘর থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাট-বাজার সহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা পাওয়া যায়। এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জৈন্তিয়াপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, জৈন্তিয়া ডিগ্রি কলেজ, জৈন্তিয়াপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজ ইত্যাদি।<br><br>
জাফলং, জয়ন্তিয়া রাজবাড়ি, শাপলা বিল, মুকাম্বরী পুরাতন মন্দির, শ্রীপুর চা বাগান ইত্যাদি এই এলাকার বিখ্যাত পর্যটন স্পট। এছাড়াও সারি নদী, কাকাই বিল, লালা খাল এবং দলাই হাওর, এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। পর্যটকরা যারা জৈন্তাপুরে ছুটি কাটাতে চান, তারা জৈন্তিয়া রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক, নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট সহ আরো বেশ কিছু উন্নতমানের রিসোর্টে থাকতে পারেন। এছাড়াও উপজেলা সদরে সাশ্রয়ী বাজেটের হোটেল-মোটেল রয়েছে।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন