“উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর মাছে ভরা” – হাওরের জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশের প্রখ্যাত জেলা কিশোরগঞ্জের এক পরিচিত বাক্য এটি। কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাণবন্ত জেলা। ভৈরব, সুরমা (দানু নদী), ঘোড়াউত্রা এবং এবং কালনী নদী, এই জেলার ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মৎস্য এবং কৃষি অর্থনীতির জন্য এই জেলা পরিচিত।<br><br>
কিশোরগঞ্জ ১৩টি উপজেলায় (উপজেলা) বিভক্ত – কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, ভৈরব, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কেন্দুয়া, ইতনা, শাহজাদপুর, নান্দাইল, এবং আসুগঞ্জ। প্রায় ২,৬৮৯ বর্গকিলোমিটারের এই জেলা পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি উপজেলা থাকলেও পরবর্তিতে এটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলায় পরিবর্তিত হয়। জেলাটি উত্তরে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ময়মনসিংহ, দক্ষিণে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং পূর্বে নেত্রকোনা দ্বারা বেষ্টিত।<br><br>
অনেক ঐতিহাসিক স্থান, কাল ও ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সুপরিচিত হলেও কিশোরগঞ্জ এদেশে সবচেয়ে বেশি প্রখ্যাত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের জন্য। সদর উপজেলার পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৬.৬১ একর জমি নিয়ে নির্মিত এই ঈদগাহে প্রতিবছর দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।<br><br>
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ছাড়াও কিশোরগঞ্জের আরেক নামকরা স্থান হচ্ছে পাগলা মসজিদ। এছাড়াও এই জেলায় রয়েছে বহুকাল পুরোনো জমিদার বাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও নানান স্থাপনা ও নিদর্শন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম হচ্ছে, জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, এগারসিন্ধুর দূর্গ, আওরঙ্গজেবের মসজিদ, তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি, বৌলাই জমিদার বাড়ি, চন্দ্রবতীর মন্দির, ইত্যাদি।<br><br>
নদী, হাওর সহ আধুনিক বা সদ্য নির্মিত জনপ্রিয় স্থাপনা ও স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম নিকলী হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু, মিঠামইন জিরো পয়েন্ট ও পর্যটন কেন্দ্র, ভৈরব রেলওয়ে ব্রিজ, নরসুন্দা নদী, ইত্যাদি। ভৈরব নদী, মিঠামোইন, জঙ্গলবাড়ি ফোর্ট, ঈসা খান ফোর্ট, ইত্যাদি এখানকার উল্লেখযোগ্য টুরিস্ট স্পট। কিশোরগঞ্জের লোকসংগীত, নৃত্য এবং নৌকা বাইচ, বাঙালি সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য অংশ।<br><br>
ধান, পাট, শাকসবজি, মাছ উৎপাদন এবং গবাদি পশু পালন এই জেলার অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অংশ। নদী, খাল-বিল, হাওর এবং বিস্তীর্ণ কৃষিজমি বেষ্টিত হওয়ায় এই জেলাটিতে প্রচুর কৃষি পণ্য এবং মৎস্য উৎপাদন হয়। এখানে প্রচুর রাইস মিল, পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল, এবং খামার রয়েছে।<br><br>
জেলাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মেডিডিকেল কলেজ, হাইস্কুল, স্কুল, এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় জেলার সুপরিচিত ও উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, এবং পরিবেশ ভালো হওয়ায় জেলার মফঃস্বল এলাকাগুলোতে প্রচুর আবাসিক ভবন গড়ে উঠছে।<br><br>
কিশোরগঞ্জের মানুষ আতিথেয়তা এবং পরিশ্রমের জন্য পরিচিত। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে পূর্ণ কিশোরগঞ্জ জেলা বসবাসের জন্য বেশ উপযুক্ত স্থান। তবে আধুনিক আবাসিক এলাকা, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, ট্রান্সপোর্টেশন ও ইউটিলিটি সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন