কানাইঘাট, সিলেট জেলার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। সুরমা নদী, এবং লুবাছড়া নদী, এই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। চা বাগান, পাহাড় এবং জলাশয়ে ঘেরা এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই মনোরম। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি পণ্য, পর্যটন এবং রেমিট্যান্স, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। এই অঞ্চলের কুটিরশিল্প, মৃৎশিল্প, এবং বেতশিল্প সারা দেশে জনপ্রিয়।<br><br>
কানাইঘাট পূর্বে জৈন্তিয়া রাজ্যের অধীনে ছিল। কথিত আছে সুরমা নদীতে কানাই নামে একজন নৌকাচালকের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে কানাইঘাট। তবে, এই গল্পের শক্ত কোনো ভিত্তি নেই। কানাইঘাট উপজেলা ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, ১৮৮০ সাল থেকেই এটি সিলেটের একটি থানা ছিল। বর্তমানে, উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন এবং ২৫০টি মৌজা রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৪১২.২৫ বর্গকিলোমিটার।<br><br>
এই উপজেলার উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট উপজেলা ও সিলেট সদর উপজেলা। কানাইঘাট সড়ক, এবং জাকিগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক এখানকার প্রধান দুটি সড়ক। এছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এই উপজেলার পাশে দিয়েই গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বেষ্টিত হওয়ায়, কানাইঘাট উপজেলার সাথে সারা দেশে যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন সুবিধাজনক। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন যোগাযোগ রুট ছাড়াও, কানাইঘাট থেকে সীমান্তের বাইরেও পরিবহন সুবিধা রয়েছে।<br><br>
এখানে ১৫০ টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কানাইঘাট সরকারি কলেজ, কানাইঘাট মহিলা কলেজ, দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, জামেয়া ইসলামিয়া ইউসুফিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ঝিঙ্গাবাড়ি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ইত্যাদি। এই উপজেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্রীড়া ক্লাব, ধর্মীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি রয়েছে।<br><br>
কানাইঘাটের জনসংখ্যার বেশিরভাগই মুসলিম, তাই এই অঞ্চলে আপনি প্রচুর মসজিদ দেখতে পাবেন। উপজেলা জুড়ে ৪৭০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে, এছাড়াও ৩০টি মন্দির এবং ২টি গির্জা রয়েছে। এই অঞ্চলে অনেক পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর মানুষজন বসবাস করেন। যাদের কৃষ্টি-কালচার স্বতন্ত্র, আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই অঞ্চলের মানুষজন খুবই পরিশ্রমী এবং অতিথি পরায়ন।<br><br>
কানাইঘাটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ হলো পাথর। সরকার উপজেলার লোভাছড়া পাথর খনি থেকে প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এছাড়াও, কৃষি হলো উপজেলার মানুষের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। অন্যান্য অর্থনৈতিক উৎসের মধ্যে রয়েছে অকৃষি শ্রম, ব্যবসা, শিল্প, চাকরি ও সেবা, রেমিট্যান্স ইত্যাদি। এখানকার চা, পানপাতা, পাথর, এবং বালু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।<br><br>
কানাইঘাট উপজেলায় অনেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সুরমা নদী, অন্ডাল বিল, তামাবিল স্থলবন্দর, সাতবাক আন্দু হ্রদ, লোভাছড়া চা বাগান ও পার্ক, পূর্ব বরচাতোলা রাবার বাগান, ইত্যাদি স্থানগুলো আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। রাত্রি যাপন এবং ছুটি কাটানোর জন্য এখানে অনেক রিসোর্ট এবং হোটেল রয়েছে।<br><br>
বসবাস করার জন্য এই অঞ্চলটি মনোরম হলের, উপজেলার ভিতরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। গ্রামগুলোর বেশিরভাগ কাঁচা রাস্তা, মফঃস্বলের রাস্তাগুলোও বেশি প্রশস্থ নয়। এমনকি উপজেলা সদর এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত এবং গর্তযুক্ত। এই উপজেলায় রেলপথ সংযোগও নেই।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন