ডুমুরিয়া, খুলনা জেলায় অবস্থিত একটি প্রাণবন্ত গ্রামীণ উপজেলা। এই উপজেলা উর্বর কৃষি ভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত।খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া সবচেয়ে বড়, টোটাল আয়তন প্রায় ৪৫৪ বর্গ/কিমি। উপজেলাটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি খুলনা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য নদীসমূহের মধ্যে রয়েছে ভদ্রা নদী, শালতা নদী, শিবসা নদী, ইত্যাদি।<br><br>
ডুমুরিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এখানকার লোকজনের আয়ের মূল উৎস আসে চিংড়ি চাষ থেকে। বাগদা, গলদা, হরিণা ইত্যাদি চিংড়ি চাষ হয় ব্যাপক হারে। ইরি মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। এছাড়াও চাষ হয় নানান শীতকালীন সবজি, যেমন আলু, টমেটো, শীম, পটল, লাউ, করোলা, ইত্যাদি। হস্ত ও কুটির শিল্পের জন্যও খ্যাত ডুমুরিয়া।<br><br>
এই উপজেলাটি নদী, বিভিন্ন জলাশয় এবং বনাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। এর উত্তরে ফুলতলা উপজেলা, দক্ষিণে বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা, পূর্বে সোনাদোনা ও বটিয়াঘাটা এবং পশ্চিমে অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা। ঢাকা-যশোর-খুলনা মহাসড়ক যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পদ্মা সেতু তৈরী হবার পর এই উপজেলার অবকাঠামো, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার বেশ ভালো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে কার্যালয় এবং কারখানা স্থাপন করেছে, তাই অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।<br><br>
ডুমুরিয়া জেলার সাক্ষরতার হার ৫৫.৬৬% এবং সরকারি, বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। এখানে ১৩০ টিরও বেশি মসজিদ, ২০টি মন্দির এবং অন্তত ৪টি গীর্জা সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্রের অভাব রয়েছে। এই উপজেলায় সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে।<br><br>
ডুমুরিয়ার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চুকনগর বধ্যভূমি, আরশনগর শেখ শাহ আফজাল মসজিদ, ডুমুরিয়া কালী মন্দির, ধামালিয়া জমিদার বাড়ি, ইত্যাদি। এখানকার প্রাচীন নিদর্শন ও পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে চেঞ্চুরী নীলকুঠি, চুকনগর নীলকুঠি, এবং মধুগ্রাম ডাক বাংলো। ঐতিহাসিক দিক থেকেও এই উপজেলা তাৎপর্য পূর্ণ, ১৯৪৮ সালে এখানে সোবনা, ধানীবুনিয়া, কানাইডাঙ্গা, ওরাবুনিয়া ও বকুলতলা গ্রামে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়।<br><br>
এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো, এখানে ডুমুরিয়া থানা, আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্প এবং ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স অফিস রয়েছে। উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা, এবং স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা পিছিয়ে। মফঃস্বল এলাকায় পরিকল্পিত অবকাঠামো এবং উন্নত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। তবে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।<br><br>
বসবাসের জন্য উপযুক্ত ডুমুরিয়া উপজেলা সবুজ শ্যামলে ঘেরা। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো হওয়ায়, এই উপজেলায় আবাসিক ভবন এবং স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। এখানকার জমির দাম, বাসা ভাড়া এবং জীবনযাপন ব্যায় সাধ্যের মধ্যে। এলাকাটি ভবিষ্যতে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের ভালো ক্ষেত্র হতে পারে।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন